
পাকিস্তানের
সামরিক আদালত ভারতীয় ‘গুপ্তচর’ কুলভূষণ যাদবকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় দেশটিকে
সতর্ক করে দিয়েছে প্রতিবেশী ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ
গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে
বলেন, ‘এ ব্যাপারে যদি আর তারা অগ্রসর হয়, তাহলে দুই দেশের সম্পর্কে এর
প্রভাব পড়বে। পাকিস্তান সরকার যেন সেটা মনে রাখে।’ আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রাজনাথ সিং বলেছেন, কুলভূষণের ফাঁসি ঠেকাতে তাঁদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব,
তার সবই করা হবে। সুষমা স্বরাজ পার্লামেন্টে কংগ্রেস দলের সদস্য শশী
থারুরকে দায়িত্ব দিয়েছেন একটি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করতে, যা উভয় কক্ষে
অনুমোদিত হবে। গতকাল ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই কুলভূষণ যাদবের
ফাঁসির আদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা
স্বরাজ বলেন, কুলভূষণ যাদব কেবল তাঁর বাবা-মায়ের নন, তিনি ভারতের সন্তান।
নির্দোষ। তাঁকে বাঁচানোর জন্য ভারতের সরকার সব ধরনের চেষ্টা করবে। সুষমা
বলেন, কুলভূষণ অন্যায় করেছেন, এ অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তিনি
পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার। পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসী কাজে মদদ
দেওয়ার বিষয়টি থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এই
ধরনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের একটি সামরিক আদালত গত সোমবার
ভারতীয় নাগরিক ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কুলভূষণ যাদবকে
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেন। গত বছরের মার্চ মাসে পাকিস্তানের
বেলুচিস্তানে ধরা পড়েন তিনি। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড
অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) হয়ে কাজ করার অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বলেছে, স্বীকারোক্তিতে কুলভূষণ যাদব বলেছেন,
পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে সিন্ধু প্রদেশের করাচি ও বেলুচিস্তানে
সক্রিয় ছিলেন তিনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, বেলুচিস্তানের
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে মদদ দেওয়া ও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের
কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য কাজ করছিলেন ওই ভারতীয় নাগরিক। তাঁর এ ধরনের
স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও প্রচার করেছে পাকিস্তানের সেনা কর্তৃপক্ষ। কুলভূষণ
যাদবের ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে গতকাল নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের
সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে ভারতের এনডিটিভি বলেছে, পাকিস্তানের গণমাধ্যমে
এই রায়কে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ডন পত্রিকা এই রায়কে বলেছে ‘বিরল
পদক্ষেপ’। দ্য নেশন বলছে, এই রায়ের ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও
বাড়বে। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকাও বলেছে, এই রায়ের কারণে
‘শত্রুভাবাপন্ন’ প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক তিক্ততা আরও বাড়বে।
পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হামিদ মির বলেছেন, পাকিস্তানের উচিত হবে
‘গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগের পক্ষের প্রমাণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে
প্রকাশ করা।
0 comments:
Post a Comment