
প্রতিবছর
সারা বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে গড়ে ২৪ হাজার লোক মারা যায়। আহত ব্যক্তির
সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার। সরকারি তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক এই
কারণে ২০১৬ সালে ১৪২ জন প্রাণ হারিয়েছে। এ দেশে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত
বজ্রপাত হয়ে থাকে। এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
কৃষিকাজে ব্যস্ততার কারণে এ সময় বজ্রপাতে প্রাণহানিও বেশি ঘটে। গতকাল
শুক্রবার দেশজুড়ে কালবৈশাখীর সঙ্গে বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। এ মাসে বজ্রবৃষ্টিসহ
ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আশরাফ
দেওয়ানের মতে, বজ্রপাত অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বায়ুমণ্ডলীয় দুর্যোগ, যা
সাধারণত বায়ুমণ্ডলের তাপীয় পরিচালনের নির্দেশক। ২০১৬ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর
প্রথম আলোতে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বায়ুমণ্ডলীয় পরিচলন বা
convection এমন একটি প্রপঞ্চ, যা সাধারণত দুটি কারণে হয়—বায়ুমণ্ডলে ভিন্ন
ঘনত্বের বায়ুভর সংমিশ্রণের ফলে; অথবা দিবাভাগে সৌরতাপের কারণে সীমানাস্তর
অত্যধিক উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণে। ফলে একধরনের বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতা থেকে
বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরে আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান বলেন, এ
দেশে পুবালি বাতাসের সঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপের মিলনে বজ্রপাত ঘটে। তিনি বলেন,
সহজভাবে বললে ঋতু পরিবর্তনের এই সময় বাংলাদেশে বায়ুমণ্ডল বেশ উত্তপ্ত
থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে উষ্ণ-আর্দ্র বাতাস ওপরে ওঠে। অন্যদিকে, ওপর থেকে শীতল ও
শুষ্ক বাতাস এর সঙ্গে মিলে বজ্রপাত হয়ে থাকে। বেশ কয়েকজন আবহাওয়া
বিশেষজ্ঞরে মতে, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এ সময় কৃষিকাজ বেশি
হওয়ায় এ দেশে প্রাণহানিও বেশি ঘটে। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বিকেলবেলা
বজ্রপাত হয়।
এর পরের সময় সন্ধ্যা ও রাতের বেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।
বজ্রপাতের আগে তাপমাত্রা বেড়ে যায় উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক
পরিচালক শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিম আকাশে ঘন জমাটবাঁধা মেঘ জমার পর
আমাদের দেশে বজ্রপাত হয়। এর আগে ভ্যাপসা গরম লাগে। বজ্রবৃষ্টি ও ঝড়ের পর
সেই গরম কমে যায়। তখন শীতল আবহাওয়া থেকে আবার তাপ বাড়তে থাকে। এরপর আবার
গরম পড়ে, মেঘ জমে, বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতের সময় উঁচু ভবনের মতো নিরাপদ আশ্রয়
নিতে পরামর্শ দেন আবহাওয়াবিদ শাহ আলম। তিনি বলেন, গাছের নিচে, পুকুর, বিলে
আশ্রয় নেওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। কারণ, গাছ ও পানি দুটোই বিদ্যুৎ পরিবাহী।
এদিকে উঁচু ভবনে বজ্রপাতের সময় আশ্রয় নিলেও ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা
যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে। এ সময় বাড়ির ধাতব কল,
সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি ধরা যাবে না। ল্যান্ডলাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা
যাবে না। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না। এসব যন্ত্র
চালু থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে এগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রয়োজনে বিদ্যুৎ-সংযোগ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। বজ্রপাতের
সময় গাড়ির ভেতর থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া ভালো। এ সময়
গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা উচিত হবে না।
0 comments:
Post a Comment