
নীলফামারীর
সৈয়দপুরে রমজানে মাছের বাজার গরম হয়ে উঠেছে। এখানে বড় মাছের চেয়ে ছোট
মাছের দাম অনেক বেশি। ৫০০ টাকা কেজির নিচে কোন দেশি ছোট মাছ পাওয়া যাচ্ছে
না। ফলে সাধারণ ক্রেতারা বাজার করতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। গতকাল
বুধবার সৈয়দপুর রেল বাজার, সবজি মার্কেটের মাছ বাজার, ভেতর মার্কেটের মাছ
বাজার, নিচু কলোনী বাজার, গ্যারিসন ক্যান্ট মাছ বাজার ও চৌমহনী মাছের বাজার
ঘুরে দেখা গেছে, পুঁটি মাছের কেজি ৬০০ টাকা, গচি, ট্যাংরা মাছের কেজি ১০০০
টাকা, মাগুর মাছ মাঝারি সাইজের ৯০০ টাকা, মলা মাছ ৫০০ টাকা কেজি হাঁকা
হচ্ছে। শহরেরর মাছ বাজারের মাছের ব্যবসায়ী নিরাসু, নিরা, বাদল জানান,
নদী-নালা ও ডোবায় পানি না থাকায় ছোট মাছ মিলছে না। অনেক কষ্ট করে বেশি দাম
দিয়ে দূরবর্তী মোকাম থেকে মাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেখানে নদী-বিল আছে সেখান
থেকে এসব ছোট মাছ নিয়ে আসা হয়। ফলে পরিবহন ও বরফ এবং অন্যান্য কারণে দাম
পড়ছে বেশি। ফলে আমাদের বেশি দামে দেশি ছোট মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে
বাজারে রুই প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও দেশি ছোট মাছ
বিশেষ করে ট্যাংরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, পুঁটি, ডারকা ও মলা মাছ
প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা নতুন বাবুপাড়ার
বাসিন্দা ও রেলওয়ে কারখানার চাকরীজীবী কাজী জাহিদুল হক জানান, রেলবাজারে
এক কেজি ট্যাংরা মাছ ১০০০ হাজার চাওয়া হয়েছে তার কাছে। তিনি রাগে ও ক্ষোভে
চলে আসেন সবজি মার্কেটের মাছ বাজারে। সেখানে গচি ও ট্যাংরা মিলে এক কেজি
দেশি মাছ কেনেন ৮০০ টাকায়। তিনি অভিযোগ করে বলে, রমজানের অজুহাতে ছোট মাছের
বাড়ানো হয়েছে। ফলে গরিব ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন মাছ না কেনে। শহরের
বাঙালিপুর সরকারপাড়ার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক আলমগীর
সরকার জানান, পরিবারের সবাই ছোট দেশি মাছ পছন্দ করেন। সে কারণে রেলওয়ে মাছ
বাজারে এসে দাম শুনে চোখ কপালে উঠেছে। বড়র চেয়ে ছোট মাছের দাম ও চাহিদার
কারণে বিস্মিত হয়েছেন তিনি। সৈয়দপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়
সূত্র জানায়, উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ এলাকার ১২১ দশমিক ৬১
বর্গকিলোমিটারে আয়তনে মোট জনসংখ্যা হচ্ছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪৬১ জন।
বিপুল এই
জনসংখ্যার জন্য প্রতিবছর মাছের চাহিদা পাঁচ হাজার ২৫ মেট্রিক টন সেখানে
উৎপাদিত হচ্ছে মাত্র এক হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন মাছ। ফলে প্রতিবছর মাছের
ঘাটতি থাকছে তিন হাজার ২৪২ মেট্রিক টন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার
পাল জানান, সৈয়দপুরে চাহিদা অনুযায়ী মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে
আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মৎস্যজীবী ও চাষি পর্যায়ে প্রদর্শনী স্থাপন,
উপকরণ বিতরণ, প্রশিক্ষণসহ সবধরণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই অঞ্চলের পুকুর,
দীঘি ও বিলে সারাবছর পানি না থাকায় মৎস্য চাষে ব্যয় বাড়ছে। আপদকালীন সময়ে
এসব মাছ উৎপাদন কেন্দ্রে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি দিতে হয়। মৎস্য চাষে
উৎসাহ দিতে র্যালি,উদ্বুদ্ধকরণ সভা, নদী খননের প্রস্তাবনা দপ্তরে পাঠানো
হয়েছে। বাজারজাতকরণের অভাবে এখানকার গলদা চিংড়ি চাষ প্রকল্পটি ভালো ফল
দিচ্ছে না বলে জানান তিনি। পরিবারের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছ চাষে সবাইকে
এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে জমিতে অপ্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার
পরামর্শ দেন তিনি। শহরের উপকন্ঠে কামারপুকুরে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য
গবেষণা ইন্সটিটিউটের স্বাদু পানি উপকেন্দ্র অবস্থিত। সেখানকার প্রধান
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান জানান, বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির মাছ
বংশবিস্তারে এই কেন্দ্রটি গবেষনার কাজ করছে। এখানে শিং, টাকি, ট্যাংরা,
তেলাপিয়া, সরপুটি ইত্যাদি দেশীয় জাতের মাছের গুণগত পোনা উৎপাদন করে
প্রদর্শনী ও চাষি পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেই সাথে মাছ চাষি ও পুকুর
মালিকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটি পূর্নাঙ্গ
কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হলে উপকৃত হবেন এই জনপদের মানুষ বলে মন্তব্য করেন
তিনি।
0 comments:
Post a Comment