
উজান
থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শুষ্ক মৌসুমেও সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি
বেড়েছে। এ কারণে সিরাজগঞ্জের সদর ও কাজীপুর উপজেলায় নদীর পশ্চিম তীরবর্তী
এলাকার প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই
সপ্তাহে এই উপজেলার দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, পাকা অবকাঠামো ও আবাদি জমি নদীগর্ভে
বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অসময়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হলেও
প্রতিরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জ পাউবো ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে উজান থেকে
নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে চার
থেকে পাঁচ ফুট পানি বেড়েছে। এতে নদীর পশ্চিম তীরবর্তী সদর উপজেলার
রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা, চর বাহুকা, টুটুলের মোড়, কাজীপুর উপজেলার
শুভগাছা ইউনিয়নের তিনটি এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। পানি নদীর তীরের তলদেশ
দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বালু-মাটি সরে গিয়ে চাপ চাপ ধরে ভেঙে পড়ছে। আজ বুধবার
পর্যন্ত এসব এলাকার দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি, পাকা অবকাঠামো, শতাধিক বিঘা আবাদি
জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর বাহুকা পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র বন্যা
নিয়ন্ত্রণ বাঁধে এবং শিমলা খুদবান্ধি বাঁধে ফাটল ধরেছে। যেকোনো মুহূর্তে এই
বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। বাঁধের ওপরে আশ্রিত মানুষ
আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সরেজমিনে আজ শিমলা-বাহুকা টুটুলের মোড়ের প্রায় সাত
কিলোমিটার ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেল, যাঁদের বাড়িঘর নদীগর্ভে গেছে,
খোলা আকাশের নিচেই রয়েছেন তাঁরা। অনেকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে ঘরবাড়ি
সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বালুঘুঘরি গ্রামের ইয়াকুব আলী বলেন, আকস্মিক পানি বাড়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে
এই ভাঙন শুরু হয়েছে। গেল তিন বছরের মধ্যে অসময়ে এমন ভাঙন আর দেখা যায়নি।
যদি এই ভাঙন অব্যাহত থাকে, তাহলে শিমলা খুদবান্ধি বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে।
এটি ভেঙে গেলে বাঁধের বাইরে থাকা তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে
যাবে। রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম
বলেন, ‘১৫ দিন ধরে অব্যাহত ভাঙনে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। পাউবোকে
একাধিকবার জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা শুধু পরিদর্শন
করেই চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ
কামনা করছি।’ সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী (শাখা কর্মকর্তা-১) রণজিৎ
কুমার সরকার বলেন, ভারতের আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার। সেই পানি
নেমে এসে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। এতে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। বাহুকা থেকে
খুদবান্ধি ও কাজীপুরের মেঘাই এলাকাজুড়ে আট কিলোমিটার স্থায়ী তীর সংরক্ষণ
বাঁধের প্রায় ৭০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে কাজ শুরু হবে। এতে রক্ষা
পাবে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ। সার্বিক বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পাউবোর
নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি আমাদের নজরে
এসেছে। জরুরি বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ই-মেইল বার্তা
পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের কাজ
শুরু হবে।’
0 comments:
Post a Comment