
মুখে
সেলাইটা স্পষ্ট। কী হয়েছিল?
জোনাথন ডেভিড সেলাইয়ে হাত বুলিয়ে বলেন,
চার-পাঁচ দিন আগে অনুশীলনে পোস্টের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এই অবস্থা। দাঁতও
ভেঙে গেছে কয়েকটা। সেই বিপর্যয় সামলে ওয়েলস মিডফিল্ডার নড়েচড়ে দাঁড়ান
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। পাশেই কয়েকজন সাংবাদিক কথা বলছেন দ্রাগো মামিচের
সঙ্গে। আবাহনীর কোচ কথা বলছেন ১৪ মার্চ এএফসি কাপে মালদ্বীপের মাজিয়ার
বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হতে যাওয়া প্রথম ম্যাচ নিয়ে। কথায় কথায় গোটা
টুর্নামেন্টই চলে এল। আবাহনী ছেড়ে গেছেন কয়েকজন খেলোয়াড় (আরিফ, হেমন্ত,
জুয়েল রানা, শাকিল, তপু বর্মণ)। জোড়াতালির দল নিয়েও কোচের আশা, ‘ভালো কিছু
হবে। আপনারা নিশ্চয়ই দেখবেন।’ ধানমন্ডিতে নিজেদের মাঠ ছেড়ে ম্যাচ ভেন্যুতে
অভ্যস্ত হতেই দেশের ফুটবল-তীর্থে অনুশীলেন আসা প্রিমিয়ার লিগ
চ্যাম্পিয়নদের। অনুশীলন শেষে সবাই যখন স্টেডিয়াম ছাড়ছেন, জোনাথন একা
দাঁড়িয়ে। লি টাক থাকলে দুজনকে একসঙ্গেই দেখা যেত। কিন্তু গত লিগ খেলেই লি
চলে গেছেন মালয়েশিয়ার লিগে। এই লি-ই জোনাথনকে আবাহনীতে এনেছেন। তাঁকে রেখে
ব্রিটিশ ফরোয়ার্ডের চলে যাওয়ায় কি একটু নিঃসঙ্গ হয়ে গেলেন জোনাথন? প্রশ্ন
শুনে হাসেন ২৬ বছরের যুবক, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, একটু তো একা লাগেই। আগেরবার
একসঙ্গে অনুশীলন করতাম। মাঠেও সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি ছিল দুজনের। সেটা তো মিস
করি।’ তবে মুঠোফোন-ফেসবুকে যোগাযোগ হয়, ‘আরে, লি তো খুব ভালো আছে
মালয়েশিয়ায়। সব সময়ই কথা হয়। লির দল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে। ওখানে সে
সবকিছু উপভোগ করছে।’ বছর তিনেক আগে থাইল্যান্ডে তাঁরা দুজন ছিলেন প্রতিপক্ষ
দলে। সেসব কথা তুলে আনেন জোনাথন। মজা করে বলেন, ‘আমাদের বন্ধুত্ব ছিল
মাঠের বাইরে। তবে মাঠে ছিলাম শত্রু। থাইল্যান্ডে খেলার সময় একে অন্যকে এক
ইঞ্চি জমিও ছাড়তাম না।’ গত লিগে জোনাথন ৮ ম্যাচে ৪ গোল করেছিলেন আবাহনীর
জার্সিতে। এবার শেখ কামাল টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে ১ গোল। তাঁর কাজ মূলত
খেলাটা গড়া। মাঝমাঠ মূল জায়গা হলেও দুই পাশেও খেলতে পারেন। প্রয়োজনে
স্ট্রাইকারের ভূমিকায়ও। বাংলাদেশে এই কয়েক মাস মাঠের সময়টা খুব একটা খারাপ
কাটেনি।
মাঠের বাইরেও না। নিজেই বলেন, ‘আমার তো ভালোই লাগে এখানে। সবাই
আমার খোঁজখবর নেয়, আদর-যত্ন করে।’ কিন্তু ভুলতে পারেন না ওয়েলস থেকে উঠে
আসার দিনগুলো। ওয়েলসেরই বিখ্যাত ফুটবলার গ্যারেথ বেলের কথা তুললেই জোনাথন
ফিরে যান অতীতে; রিয়াল মাদ্রিদ তারকার সঙ্গে কাটানো স্মৃতিময় সময়ে। তাঁর
বাড়ি থেকে বেলের বাড়ি গাড়িতে ২৫-৩০ মিনিটের রাস্তা। জোনাথন বলে যান, ‘ওয়েলস
অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলেছি বেলের সঙ্গে। অনূর্ধ্ব-১৭, ১৯ দলেও খেলেছি
একসঙ্গে। ও আমার চেয়ে এক বছরের বড়। অনেক হাসি-আনন্দে থাকতাম আমরা।’
আর্সেনাল তারকা অ্যারন রামসের কথাও তুলে আনেন। ওয়েলসের বয়সভিত্তিক দলসহ
কার্ডিফ সিটিতে খেলেছেন একসঙ্গে। জোনাথন ওয়েলস অনূর্ধ্ব-২১ দলে প্রথম
খেলেছেন মাল্টার বিপক্ষে ২০০৮ সালে। প্রথম গোল লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে ২০০৯
সালে। দল জিতেছিল ৫-১ গোলে। কিন্তু এরপর ছিটকে গেলেন ওয়েলস ফুটবলের মূল
স্রোত থেকে। জোনাথন এটিকে ভাগ্য মানেন। বেল কাঁপাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ, আর
তিনি নিজে পড়ে আছেন ফুটবলের তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের ক্লাবে। তবে এসব
আক্ষেপ-আফসোস সবই পুষে রাখেন মনের ভেতর। সদা হাস্য জোনাথনের কাছে বর্তমান
দল আবাহনীই সব। এসব যখন বলছিলেন, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ফটকে ডাব খাওয়ার
ধুম পড়ে আবাহনীর খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের। জোনাথন তাতে অবশ্য যোগ দেওয়ার সময়
পেলেন না। দ্রুতই উঠে যেতে হলো টিম বাসে।
0 comments:
Post a Comment