ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরে আসার সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রেই বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। ওয়াশিংটনকে বাদ দিয়ে জলবায়ু চুক্তি রক্ষায় এগিয়ে এসেছে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় রাজ্য এবং দেশের রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা। ট্রাম্প মুখ ফিরিয়ে নিলেও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এখনও দেশটির প্রতিশ্রুতি রক্ষার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ। তিনি বলেন, শহর, রাজ্য ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এটা রক্ষা করা যেতে পারে। এ জন্য ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই বলেও জানান ব্লুমবার্গ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেড় কোটি ডলার (১৫ মিলিয়ন) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও ইন্ডিপেনডেন্টের। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে দেয়া এক বক্তৃতায় প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সমালোচিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও কার্বন নিঃসরণকারী বৃহত্তম উৎস চীন, ইউরোপ ও ভারত প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সম্মত হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতৃত্বের সারিতে উঠে এসেছে চীন ও ইউরোপ। চীনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক এ চুক্তির শর্ত রক্ষায় কাজ করতে সম্মত হয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন। বিশ্বের যে কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নেতৃত্বে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে ভারত সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পরিবেশমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অটুট সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আরকাদি ভোরকোভিচ বলেন, ‘আমরা ওই চুক্তিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছে আমাদের নেই।’ ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ১৯৫ দেশের নেতারা বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা ২ ডিগ্রির নিচে নামিয়ে আনায় সম্মত হন। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) জানায়, চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসায় চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও দশমিক ৩ ডিগ্রি যোগ হতে পারে। শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক বৈঠকে ব্লুমবার্গ বলেন, ‘প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণে আমেরিকানদের পাশে ওয়াশিংটনের প্রয়োজন নেই। আমি বিশ্বকে জানাতে চাই যে, জলবায়ু চুক্তিতে আমেরিকার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই পূরণ হবে। এ জন্য শহর, রাজ্য ও ব্যবসায়ের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে বর্তমানে কর্মরত ব্লুমবার্গ। তিনি আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা অর্ধেক পথ অগ্রসর হয়েছি এবং ওয়াশিংটনের সমর্থন ছাড়াই আমাদের পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করব।’ ব্লুমবার্গ বলেন, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের প্যারিস চুক্তিকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের উভয় দলের মেয়র, গভর্নর এবং ব্যবসায়ীরা এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। বিবৃতিটি আমরা জাতিসংঘের কাছে দিয়ে কার্বন নিঃসরণে গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে যাচ্ছি। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন ব্লুমবার্গ। মার্কিন এ ধনকুবের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র্র সরকারের অন্যান্য উপাদান ও সমাজের অন্যান্য অংশ থেকে নেতৃত্ব দেয়া হবে। ট্রাম্পের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তে গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার নির্বাহী প্রধান ইলন মাস্ক ও বহুজাতিক সংস্থা ডিজনির প্রধান বব ইগার প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
Share on Google Plus

About Unknown

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment