ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিবিসির টিভি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল টোরি পার্টির নেতা ও বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ও প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহের চেয়েও কম সময় আগে শুক্রবার অনুষ্ঠিত ওই বিতর্কের প্রশ্নোত্তর পর্বে দর্শক-শ্রোতাদের কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েন এই দুই নেতা। বিবিসি ওয়ানের এ বিশেষ বিতর্কানুষ্ঠানে প্রায় ৯০ মিনিট ধরে তাদের ধারাবাহিকভাবে কঠিন সব প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি বেতন-ভাতার ব্যাপারে রক্ষণশীল দলের অবস্থানের ওপর কঠিন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় প্রধানমন্ত্রী তেরেসাকে। ভিক্টোরিয়া ডাভে নামের একজন সেবিকাসহ উপস্থিত জনতা প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করেন তাকে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) কর্মীদের জন্য মাত্র ১ শতাংশ বেতন বাড়ানোয় তেরেসাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেন তিনি। পক্ষান্তরে ব্রিটেন যদি আক্রান্ত হয়, প্রতিপক্ষ দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ছুড়বেন কিনা এমন প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞাসা করা হয় করবিনকে। এর আগে ক্ষমতাসীন সরকারের এক নির্দেশনায় বলা হয়, শত্রু কোনো দেশের পক্ষ থেকে পরমাণু হামলার হুমকির সম্মুখীন হলে ব্রিটেন ‘প্রথমেই হামলার কৌশল’ ব্যবহার করবে। প্রশ্নের উত্তরে তেরেসা বলেন, সরকারি স্বাস্থ্য খাতের চাকরিজীবীরা যে পরিশ্রম করেন তা তিনি বোঝেন। তারপরও তার দল স্বাস্থ্য খাতে বেতন না বাড়ানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে সত্যি বলছি, আমরা স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি অর্থ দেব। তবে সরকারের কাছে জাদুর টাকার গাছ নেই যে, আমরা যখন যা চাই তাই করে ফেলতে পারি। তিনি দাবি করেন, জাতীয় স্বাস্থ্য খাতের বেতন-ভাতা তো বাড়ানো হয়েছে। এ সময় একজন শ্রোতা চেঁচিয়ে উঠে বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য খাতের প্রকৃত বেতন ১৪ শতাংশ কমেছে। তাই আপনি আমাদের বলবেন না যে, আমরা বর্ধিত বেতন পাচ্ছি।’ ব্রিটেনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশলের ব্যাপারে শ্রোতাদের পক্ষ থেকে কঠিন প্রশ্নের মুখে লেবার নেতা করবিন বলেন, আমি মনে করি বিশ্বের কোথাও যে কারও পক্ষেই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ধারণা একেবারেই বিপজ্জনক ও ভয়াবহ। এর ফলে লাখ লাখ প্রাণ ও পরিবেশের ধ্বংস সাধিত হবে। সেক্ষেত্রে এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকব। যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তিনি কি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে করবিন বলেন, ‘আমি মনে করি, সমগ্র বিশ্বের কূটনৈতিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টা আসবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম হামলার কৌশল থাকা উচিত নয়। আমি মনে করি বিশ্বের পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রিকরণের কার্যকর করতে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আমাদের থাকা উচিত। আপনি এমন একটা বিশ্ব চাইতে পারেন না, যেখানে আমাদের সবাইকে পরমাণু অস্ত্রের কারণে মরতে হতে পারে।’ তিনি জানান, পরমাণু অস্ত্র্রমুক্ত একটি বিশ্বের জন্য তিনি কাজ করবেন। তিনি বলেন, এজন্য আমি সবকিছু করব। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যে কোনো হুমকি আগে থেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। অপর এক শ্রোতা প্রশ্ন করেন, আপনি কেন আইরিশ রিপাবলিকান আর্মিকে (আইআরএ) সন্ত্রাসী হিসেবে মনে করেন না। এই প্রশ্নের জবাবে করবিন বলেন, ‘উত্তর আয়ারল্যান্ড বা যে কোনো জায়গার যে কানো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতি আমি ঘৃণা জানিয়েছি।’
0 comments:
Post a Comment