একাত্তর এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই



১৯৭১ সালে আমি যখন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের ওপর সংঘটিত গণহত্যার প্রতিবাদ করেছিলাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সমর্থন করেছিলাম, তখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। প্রতিবাদকারী আমার অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আমাকেও জেলে নেওয়া হয়েছিল। আমার বেশ মনে আছে, জেলে যাওয়ার আগে লাহোরের সর্বত্র দেয়ালে দেয়ালে একটি স্লোগান লেখা দেখেছিলাম: ‘ক্রাশ ইন্ডিয়া’। এ ধরনের স্লোগানগুলোর পেছনে সাধারণত কোনো দলের নাম লেখা থাকত না; তবে কখনো কখনো জামায়াত-ই-ইসলামী, কিংবা জামায়াত ই-তালবানামের দুটি দলের নাম দেখা যেত। সেটা এমন এক সময় ছিল, যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ চলছিল। ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ এই মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি একই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানেও একটি যুদ্ধ চলছিল, বিশেষ করে লাহোর তথা পাঞ্জাবে। কিন্তু যুদ্ধের সমরসজ্জা ও প্রকৃতিগতভাবে এই দুই যুদ্ধের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে  অর্থাৎ বাংলাদেশে যখন সামরিক অস্ত্রসম্ভার দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে দমন করা হচ্ছিল, নিরীহ মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানে তখন প্রধান অস্ত্র ছিল ঘৃণা; অর্থাৎ ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ। শুধু ঘৃণা কিংবা বিদ্বেষই নয়, সঙ্গে ছিল নেতিবাচক ‘প্রোপাগান্ডা’ বা অপপ্রচার নামের আর্টিলারি শেল। এই প্রোপাগান্ডা শেলগুলো ছিল ধর্ম ও কথিত ‘পাকিস্তানি দেশপ্রেমে’র আবরণে আবৃত। পাকিস্তানি গণমাধ্যমের পাশাপাশি পাকিস্তানের মসজিদগুলোতে লাউড স্পিকারে ঘৃণা আর বিদ্বেষমিশ্রিত অপপ্রচারের ভারী বোমাবর্ষণ করা হতো। জামায়াত-ই-ইসলামী ও অন্যান্য ডানপন্থী ধর্মীয় দল ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচারের মাধ্যম হিসেবে মসজিদ ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বেছে নিয়েছিল। একই সময়ে জামায়াত-ই-ইসলামী ও অন্য ডানপন্থী ধর্মীয় দলগুলোর পাশাপাশি চীনপন্থী সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্টরা পাকিস্তানের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এই ব্যাধি ছড়াতে থাকে।
চীনপন্থী বাম ধারার শিক্ষক ও ছাত্ররা ঘৃণা ও বিদ্বেষপূর্ণ এই অপপ্রচার চালাতে থাকে। ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে এদের মূল পার্থক্য ছিল, ইসলামপন্থী দলগুলো ধর্ম ও পাকিস্তানি দেশপ্রেম—দুটোর দোহাই দিত; আর  চীনপন্থীরা শুধু দেশপ্রেমের দোহাই দিত। এটা ছিল অদ্ভুত এক জোটের অদ্ভুত যুদ্ধ। এর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল ইয়াহিয়া, যিনি কিনা ছিলেন মদ্যপ, লম্পট, অসৎ আর খল চরিত্রের একনায়ক। আর তাঁর পেছনে ছিল একটি জোট; সেটার একদিকে ছিল জামায়াত-ই-ইসলামী ও অন্যান্য ডানপন্থী ধর্মীয় দলগুলো (জামায়াত-ই-ইসলামীর নেতৃত্বে), অন্যদিকে ছিল চীনপন্থী বামেরা (পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মজদুর কিষান পার্টির নেতৃত্বে)। এসবের বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে দাঁড়ানো আমরা কিছু মানুষ ছিলাম। এই সময়, পশ্চিম পাকিস্তানের, বিশেষ করে পাঞ্জাবের অল্প কিছু মানুষ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। সাহস দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতি সমর্থন দিয়ে, যাঁদের অবস্থান ছিল ওপরে বর্ণিত ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে জোটের বিপরীত মেরুতে। এই মানুষগুলো ছিলেন গাছের ডালে বসে থাকা পাখির মতো সহজ শিকার। শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, পুলিশ আর বিচারব্যবস্থাই নয়; পশ্চিম পাকিস্তানের মৌলবাদী আর ধর্মান্ধ দলগুলোর পাশাপাশি চীনাপন্থী বামেরা ছিল তাদের প্রতি বড় হুমকি। পাকিস্তানের পাঞ্জাবে, বিশেষ করে লাহোরের অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ, যাঁরা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির যুদ্ধ তথা অধিকার আদায়ের প্রতি সমর্থন জানালেন, তাঁরা আক্ষরিক অর্থেই প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, লাহোরের কারাগারে আমাদের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি পাকিস্তানি পুলিশ কিংবা কর্তৃপক্ষ ছিল না; আমাদের প্রতি সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল ওই সময়ের কয়েদিরা, যারা যেকোনো সময় আমাদের মেরে ফেলতে পারত। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের ইন্ধনে কিংবা মৌলবাদী এবং চীনপন্থী বাম দলগুলোর অপপ্রচারের কারণে উচ্ছৃঙ্খল কয়েদিরা আমাদের মেরে কাফের আর বিশ্বাসঘাতক বলে চালিয়ে দিতে পারত। জেলখানায় আমাদের সময় কীভাবে কেটেছে কিংবা কীভাবে আমাদের দেখা হয়েছে, সেটা এক পৃথক গল্প। কিন্তু যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী যুদ্ধে হেরে গেল এবং ঢাকায় আত্মসমর্পণ করল; পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন এল। সেনাশাসনের স্থলে একটি বেসামরিক সরকার স্থাপিত হলো। জুলফিকার আলী ভুট্টো তাঁর হাতে শাসনব্যবস্থা নেওয়ার পর সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। আমাদেরও মুক্তি দেওয়া হলো। আমরা যখন জেল থেকে বেরিয়ে এলাম, তখন লাহোরে পরিবর্তন লক্ষ করলাম। এমনকি লাহোরের দেয়ালে দেয়ালে লেখা সেই স্লোগানগুলোও পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
আগে যেখানে লেখা ছিল ‘ক্রাশ ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারত গুঁড়িয়ে দাও’, এখন সেখানে লেখা ‘ঢাকা যাও, নারাজি ভাইকো মানাও’। অর্থাৎ ‘ঢাকা যাও, ক্ষুব্ধ ভাইকে বোঝাও’। কখনো কখনো এমনও লেখা ছিল, ‘ইন্দিরা গান্ধীকো ছোড়, ঢাকা যাও ক্ষুব্ধ ভাইকো মানাও’। অর্থাৎ ইন্দিরা গান্ধীর মাধ্যমে নয়,  ঢাকায় গিয়ে ক্ষুব্ধ ভাইকে বোঝাও। আমি পরে জানতে পেরেছি, এই নতুন স্লোগানের পেছনে যে ব্যক্তিটি ছিলেন, তাঁর নাম মাসুদ কাদের পোশ, যাঁকে মাসুদ ভগবান নামেও ডাকা হতো। মূলত তিনি ছিলেন একজন সেক্যুলার পাঞ্জাবি জাতীয়তাবাদী এবং প্রাক্তন বেসামরিক আমলা। পূর্ব পাকিস্তানিদের, বিশেষ করে পাঞ্জাবিদের বাংলাদেশ সম্পর্কে মতামত গঠনে এই স্লোগান কতটুকু ভূমিকা পালন করেছিল কিংবা কতটুকু পরিবর্তন করেছিল, সেটা অন্য অধ্যায়, কিন্তু স্লোগানটি এখনো আমার মনে গেঁথে আছে। আমার প্রায়ই মনে হয় যে পাঞ্জাবিরা তথা পশ্চিম পাকিস্তানিরা যদি এই স্লোগানের অর্থ বুঝতে পারত এবং এর অর্থ মেনে নিত, তবে এটা শুধু পাকিস্তান আর বাংলাদেশের যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোই পরিবর্তন করত না বরং উপমহাদেশের ইতিহাসও অন্য রকম হতো। ভারতীয় উপমহাদেশের দৃশ্যপট বদলে দিত। সবকিছু বাদে, নিদেনপক্ষে লাখ লাখ মানুষের জীবন ধ্বংস হতো না। পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের ধর্মীয় সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ মারা যেত না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তালেবান, আইএস ও অন্যান্য জিহাদি জঙ্গি ধর্মীয় গ্রুপ তৈরির ভিত্তিটা রয়েছে একই আদর্শের মাঝে, যেমন করে ১৯৭১ সালে আলবদর ও আলশামস তৈরি করা হয়েছিল। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত ও ইরানের যেসব জঙ্গি কারখানা রয়েছে, সেখানে একই ফর্মুলায় জঙ্গি উৎপাদন করা হয়, ঠিক যেমনটা হয়েছিল আলবদর ও আলশামস তৈরির ক্ষেত্রে। ‘কাফের নিধন করো, ইসলাম বাঁচাও, পবিত্র যুদ্ধে জিহাদে অংশ নাও এবং বেহেশতের টিকিট নাও’। সন্ত্রাসবাদের ভাইরাসটির জন্ম কোথায়, সেটা প্রশ্ন বড় নয়, যখন এটা আফগানিস্তানের মতো একটা দেশকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলেছে এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশকে বিভিন্ন মাত্রায় আঘাত হানছে। সন্ত্রাসবাদ যখন এক মুসলিম দেশে আঘাত হানছে,
তখন শত্রুপক্ষের অন্য মুসলিম দেশে সেটা উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। উদ্‌যাপন করা এই দেশগুলো কী বোকা! তারা সচেতনভাবে জানে যে তারা নিজেরা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে। কেননা, তারা নিজেরাই হবে সন্ত্রাসবাদের পরবর্তী শিকার। ঢাকায় যখন একজন সন্ত্রাসী আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়, তখন লাহোরে যারা এই হামলা কিংবা বিস্ফোরণের উদ্‌যাপন করে, তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তাদের আরেক সহযোগী পরবর্তী সময়ে লাহোরের মাটিতেই বিস্ফোরণ ঘটাবে। এই সময় আমার আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট নজিবুল্লার কথা মনে পড়ে। তিনি পাকিস্তানকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমি পাকিস্তানকে সরাসরি বলছি, আফগানিস্তানে জিহাদের নামে অশান্তি সৃষ্টি কোরো না! আজ তোমরা তোমাদের প্রতিবেশীর বাড়িতে যে আগুন দিচ্ছ, একদিন সেই আগুনের শিখায় তোমাদের ঘর জ্বলবে।’ নজিবুল্লার কথা আজ শতভাগ সঠিক। অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ কিংবা প্রতিবন্ধীসহ ১০ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষ এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসের বলি হয়েছে এই পাকিস্তানেই। পাকিস্তানে আজ কেউ আর নিরাপদ বোধ করে না। যে কেউ, যেকোনো সময়ে, যেকোনো স্থানেই  সন্ত্রাসবাদীদের আক্রমণে মারা যেতে পারে। যেকোনো স্থানেই বিস্ফোরিত হতে পারে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বোমা। এর কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। মসজিদ, ইমামবাড়া, গির্জা, মন্দির, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারাসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই মূল লক্ষ্য। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, আদালতসহ অন্য স্থাপনাগুলো রয়েছে দ্বিতীয় সারির লক্ষ্যবস্তু হিসেবে। শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহারের তত্ত্ব চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। অস্ত্র হিসেবে সন্ত্রাসবাদ মোটেই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই অস্ত্র আপনার শত্রুদেশকে আপনার আদেশে আঘাত করতে পারে বটে, তবে পরবর্তী মুহূর্তেই যে আপনাকে আক্রমণ করবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।
এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সত্য যে, পাকিস্তানই তালেবান, মুজাহিদীনসহ অন্য ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের তৈরি করেছে এবং তাদের আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদে পাঠিয়েছিল। একই তালেবান, মুজাহিদীনসহ অন্যান্য ধর্মীয় সন্ত্রাসীই আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ভারত আর আজ পাকিস্তানের সেই ক্ল্যাসিকেল শত্রু নেই; তার স্থলে প্রতিস্থাপিত হয়েছে তালেবান, মুজাহিদীনসহ অন্য ধর্মীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান শত্রু এখন এই তালেবান, মুজাহিদীনসহ অন্য ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা। বর্তমান বিশ্বে ঐক্য আর মেরুকরণের ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যুদ্ধটাই এখন ঐক্য আর সহযোগিতার নতুন ধারণা। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে শত্রুতা দূর করার এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। দুই দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে পারে এবং এর থেকে চিরতরে মুক্তির পথ খুঁজতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ক্ষুব্ধ ভাইকে বোঝানোর দায়িত্ব ও সময় ফুরিয়ে যায়নি। এটা এখনো ন্যায্য, প্রকৃত ও উপযুক্ত সময়। কে বা কারা নেবে এই উদ্যোগ? সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো একই শত্রুর বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করাটা। এটা ভালো হয় যে, যদি পাকিস্তান উদ্যোগটা নেয় এবং বাংলাদেশকে বড় ভাইয়ের সম্মানে বসিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটা সম্মিলিত যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানায়।
অনুবাদ: এস এম আনোয়ার হোসেন।
সৈয়দ আসিফ শাহকার: সুইডেনপ্রবাসী পাকিস্তানি সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ।
Share on Google Plus

About Unknown

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment