
মাত্রই
দুই টেস্ট আগে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, যেটি আবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ
ব্যক্তিগত ইনিংস হিসেবে ঢুকে গেছে আর্কাইভে। বোলিংটাও নিতান্ত খারাপ যায়নি।
সে জন্যই তো দুই বছরের মধ্যে আবারও মাথায় টেস্ট-সেরা অলরাউন্ডারের মুকুট।
শ্রেষ্ঠত্বের এই স্বীকৃতি নিয়ে যে টেস্টে খেলতে নামলেন, তাতেই কিনা ধূসর
তাঁর উপস্থিতি! জানাই ছিল, সাকিব আল হাসানকে এটি একটু হলেও পোড়াবে। সাকিব
মনের ব্যথাটা একটুও লুকোননি, কাল সরাসরি বলেই ফেললেন, ‘আরও কিছু উইকেট পেলে
ভালো হতো। এতগুলো ওভার বোলিং করলাম, উইকেট সেভাবে এল না।’ দুই ইনিংস
মিলিয়ে গল টেস্টে ৫৭.১ ওভার বোলিং করেছেন সাকিব। রান ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে
গেছে, ২০৪। উইকেট মাত্র ৩টি। বোলিংয়ে যে তীব্রতা ছিল, তা কি একটু মলিন হয়ে
পড়ল, এমন আলোচনা হতে হতেই সাকিব কাল দারুণ একটি বলে বোল্ড করলেন আসেলা
গুনারত্নেকে (০)। আর তারও আগে কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ বানিয়েছেন তাসকিনের
হাতে। সাকিব এভাবেই বারবার ঘুরে দাঁড়ান। তবে সাকিবের জন্য আরেকটি পরীক্ষা
অপেক্ষা করছে আজ। এবার দেখাতে হবে ব্যাটিং সামর্থ্য। এবং বাঁহাতি
অলরাউন্ডার জানেন, এই পরীক্ষায় তাঁকে উত্তীর্ণ হতেই হবে। শ্রীলঙ্কা মাথার
ওপর চাপিয়ে দিয়েছে ৪৫৭ রানের বোঝা। এই বোঝা পিঠে নিয়েই লড়াই করতে হবে।
আপাতত টেস্ট বাঁচানোর লড়াই, যদি ‘ভালো’ কিছু ঘটে যায়, তারপর জয়ের চিন্তা,
‘সবচেয়ে সম্ভাব্য ফল ড্র। আর যদি আমরা খুবই ভালো ব্যাট করতে পারি, তাহলে
অন্য কথা।’ তামিম-সৌম্যর সতর্ক এবং সদর্প ব্যাটিংয়ে বিনা উইকেট ৬৭ রান নিয়ে
ফেরা গেছে ড্রেসিংরুমে, হাতে ১০টি উইকেটই অক্ষত।
এটাই তাঁকে আশা দিচ্ছে,
‘আমাদের হাতে ১০টি উইকেট রয়েছে। এটাই সবচেয়ে ভালো কথা। আমাদের জন্য কালকের
(আজ) প্রথম সেশনটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ঘণ্টাটি আরও বেশি করে। যদি আমরা
একটি উইকেট হারিয়েও লাঞ্চে যাই, মনে হয় সমস্যা হবে না। তবে আমাদের সবাইকে
ভালো ব্যাট করতে হবে।’ এই ভালো ব্যাট করা প্রসঙ্গে প্রথম ইনিংসে তাঁর ২৩
রানের বিষয়টি এসে যায়। তবে সাকিব মনে করছেন, রান মাত্র ২৩টি হলেও তিনি
ব্যাটিংটা ভালো করেছেন। তার মানে বলতে চাইলেন, চায়নাম্যান বোলার লক্ষ্মণ
সান্দাকানের বোলিংয়ে যেভাবে আউট হয়েছেন, সেটি নিছক একটি দুর্ঘটনা মাত্র।
এখনো দ্বিতীয় ইনিংস তাঁর হাতে আছে এবং নিশ্চিতভাবেই সেটি কাজে লাগাতে চান।
দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দিয়েছেন তামিম ও সৌম্য। বিশেষ
করে, সৌম্যর ব্যাটিং নিয়ে সাকিব উচ্ছ্বসিত, ‘সৌম্য খুবই ভালো ব্যাটিং
করেছে। ও আগাগোড়াই ইতিবাচক ছিল।’ দুই ওপেনারের ব্যাটিংই দলের বাকি সবাইকে
ভালো ব্যাট করতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে বিশ্বাস সাকিবের, ‘ওদের ব্যাটিং আমাদের
কিছু শিক্ষা দিয়েছে। আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’ বাংলাদেশ ভালো শুরু করেও
শেষটায় তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে অতীতে বহুবার, বিষয়টি সাকিব বিস্মৃত নন। এ
প্রসঙ্গেই সাকিব চলে গেলেন টেস্ট ব্যাটিংয়ের একটি মৌলিক দিকে, ‘সেট
ব্যাটসম্যানদের পার্টনারশিপ গড়তে হবে। দু-তিনটি বড় পার্টনারশিপ দরকার হবে
আমাদের। আমরা তো চাইব তামিম-সৌম্য যতটা পারে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করুক।’
জিততে হলে দরকার আজ ৩৯০ রান। একটি কষ্টকল্পনাই বটে। তবে সাকিবের মন থেকে
‘জয়’ শব্দটা একেবারে মুছে যায়নি, ‘জানি ওদের দুর্দান্ত তিনজন স্পিনার আছে।
আসলে ওদের সবাই ভালো বোলিং করেছে। তবে জয় না হোক, ড্র মনে হয় আমরা এ টেস্টে
করতে পারব।’ ড্রয়ের জন্য উইকেট হাতে থাকাটা জরুরি। হাতে ১০ উইকেট আছে।
চতুর্থ দিন শেষে এটিই দলের কাছে সবচেয়ে বড় স্বস্তির। সাকিবের মুখে বারবার
ঘুরেফিরে এল দুটি শব্দ, ‘১০ উইকেট, ১০ উইকেট...।’ গল টেস্ট শেষ দিনে আজ কী
উপহার দেবে সাকিবদের?
0 comments:
Post a Comment