
গনগনে
রোদের তাপ কমে আসছে। অনেকটাই মিহি রোদের আলো। ঠিক তখনই আগের দিনের
শেষবেলার পুনরাবৃত্তি। একঝাঁক মেঘ উড়ে এল আকাশে। চারপাশ এতটাই আঁধার করে এল
যে সৌম্য-তামিমের পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব ছিল না। দুই আম্পায়ারের কাছে
আবেদন করতেই তাঁরা অনুমতি পেলেন মাঠ ছেড়ে যাওয়ার। এরপর বৃষ্টি। তাতে ১১
ওভার আগেই চতুর্থ দিনের খেলা শেষ। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বিনা উইকেটে ৬৭
রান। ধৈর্যশীল তামিমের রান ১৩, ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ৪৭ বলে ৫৩ করে
অপরাজিত সৌম্য, যেটি ম্যাচে তাঁর টানা দ্বিতীয় ফিফটি। হাসি ফিরে এসেছে
বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে! তবে এই হাসিকে জীবন্ত রাখতে আজ কী কঠিন লড়াই যে
করতে হবে মুশফিকদের, সেটি তাঁরা বুঝতে পারছেন। সাকিব যেমন কাল খেলা শেষে
বলে গেলেন, ‘কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।’ প্রথম ইনিংসে ১৮২ রানে এগিয়ে থেকে
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ২৭৪ রান তুলে ঘোষণা করল ইনিংস। মোট ৪৫৬ রানের
লিড।
অর্থাৎ নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে নিজেদেরই যাতে জয়ের সম্ভাবনা থাকে, সে
রকম একটা লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়া প্রতিপক্ষকে। বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য ৪৫৭
রানের লক্ষ্য, অর্থাৎ সেটি ছুঁতে আজ করতে হবে ৩৯০ রান। মেঘ-বৃষ্টির পেটে
চলে যাওয়া ওভারগুলো ধরলে ১০০ ওভারের বেশি থাকবে হাতে। সৌম্যর ব্যাট চালানো
দেখে মনে হতে পারে, বাংলাদেশ রান তাড়া করে জেতারই চেষ্টা করবে। জয় কি
সম্ভব? এর আগে বাংলাদেশ কখনো এক দিনে এক ইনিংসে এত রান করতে পারেনি। গত
জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়েলিংটন টেস্টে প্রায় কাছাকাছি যাওয়া
গিয়েছিল, রান উঠেছিল ৩৮৮। কিন্তু সে তো ছিল প্রথম ইনিংস, আর এটি নিজেদের
দ্বিতীয় এবং ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে। তাও শেষ দিনে স্পিনের ছোবল হানার জন্য
‘কুখ্যাত’ গলের উইকেটে। সাকিবের কথাটাই ঠিক, এই টেস্টের বাস্তবসম্মত ফল
ড্র। তবে সেটিও হয়তো সহজে আসার নয়। মুশফিক-সাকিব-তামিম-সৌম্যরা কাল হোটেলে
ফিরে একটু প্রাণভরে যখন নিশ্বাস ফেলেছেন, রঙ্গনা হেরাথ নিশ্চিতই ভেবে ভেবে
আকূল। একটু দেরিতে ইনিংস ঘোষণা করে কি ভুল করে ফেললাম!
তবে ভুল তিনি
করেননি। অতীতের কিছু কীর্তিই এই বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁকে সতর্ক থাকতে বলেছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিল ৪১৩ রান।
২০১৫ সালে তো ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫৫ রান করে উল্টো পাকিস্তানকেই
ফেলে দিয়েছিল কাদায়। হেরাথ এই ইতিহাস ভুলে যেতে পারেন না। আর তাই চা-বিরতির
পরও আরও ৫ ওভার খেলে শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করল ২৭৪ রানে। এর মধ্যে প্রথম
ইনিংসের ভুল শুধরে উপুল থারাঙ্গা করলেন তাঁর তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। দিনেশ
চান্ডিমাল ১১তম টেস্ট ফিফটি। তবে এত সহজেই শ্রীলঙ্কা এত রান তুলতে পারত না
যদি না বাংলাদেশের বোলিং ও ফিল্ডিং আরেকটু আঁটসাঁট হতো। এদিনও যথারীতি
ক্যাচ পড়েছে। ৭ রানে দিমুথ করুনারত্নের ক্যাচ ফেলেছেন সাকিব। শূন্য রানে
দিলরুয়ান পেরেরার ক্যাচ মাহমুদউল্লাহ, ১১ রানে থাকা চান্ডিমালের ক্যাচ
সৌম্য। তিনবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ পর্যন্ত ওই
মিরাজই সফলতম বোলার, ৭৭ রানে তাঁর ২ উইকেট। সাকিবেরও ২ উইকেট, যদিও রান
দিয়ে ফেলেছেন এক শরও বেশি। বাকি দুটি উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মোস্তাফিজ
ও তাসকিন। শ্রীলঙ্কার রান তোলার গতি যদি মন্থর হতো, তাহলে ড্র করার
লক্ষ্যে আরও অবিচল থাকতে পারত মুশফিকের দল। তারপরও সুযোগ আছে, উইকেট এখনো
বিমাতাসুলভ আচরণ করেনি।
ব্যাটসম্যানরা প্রয়োগক্ষমতা দেখাতে পারলে মনে হয় না
গলে এর আগের টেস্টের গৌরবময় কীর্তির তুলনায় এই টেস্টটাকে মলিন লাগবে।
হ্যাঁ, শ্রীলঙ্কা স্পিনারত্রয়ী সর্বস্ব উজাড় করে যতটা বিষ তাঁদের সঞ্চয়ে
আছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশেরও উচিত হবে তীব্র মানসিক শক্তি দিয়ে
ওঁদের রুখে দাঁড়ানো। সাকিব সেই কথাই বলে গেলেন কাল সাংবাদিকদের কাছে। জয়
একটা তীব্র আনন্দ-জাগানিয়া অনুভূতি। জয়ের গন্ধ শুঁকে খোলা গল স্টেডিয়ামের
চারদিক ঘিরে অনেক দর্শকের ভিড় দেখা গেল। পঞ্চদশ শতাব্দীর পুরোনো ডাচ
দুর্গের ছাদও তখন বিনে পয়সার গ্যালারি। শ্রীলঙ্কার এই দর্শকেরা এসেছিলেন
বাংলাদেশের বিপর্যয় দেখতে। কিন্তু তামিম-সৌম্যের ব্যাটে উল্টো দর্পই তাঁদের
দেখতে হলো। দিনের খেলার অকালসমাপ্তির জন্য তাঁরা মেঘ-বৃষ্টিকে অভিসম্পাত
করতে পারেন। তবে বাংলাদেশের তাতে কিছু এসে-যায় না। দুই দিন ধরে মেঘ আর
বৃষ্টি হঠাৎ এসে মুশফিকের দলকে বন্ধুতার উষ্ণ ছোঁয়াই একটু দিয়েছে।
চতুর্থ দিনের শেষে
শ্রীলঙ্কা: ৪৯৪ ও ২৭৪/৬ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ: ৩১২ ও ৬৭/০
চতুর্থ দিনের শেষে
শ্রীলঙ্কা: ৪৯৪ ও ২৭৪/৬ (ডিক্লে.)
বাংলাদেশ: ৩১২ ও ৬৭/০
0 comments:
Post a Comment